নিজস্ব প্রতিবেদক
জীবনে সুযোগ ও সম্ভাবনা বার বার আসে না। তাই মানুষকে নিজের জন্যে যে সুযোগটা ভালো তা বেছে নিতে হয়।
২০২০ সালে যখন ঘরে বসে লকডাউনে হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছিলাম তখন এক বান্ধবীর আমন্ত্রণে ওমেন এন্ড ই-কমার্স ট্রাস্ট (উই) গ্রুপে যোগ দেই। এই গ্রুপের বিভিন্ন অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য এবং উদ্যোক্তাদের গঠনমূলক কন্টেন্ট পড়ে অনুপ্রানিত হই। নিজের মধ্যে একটা আত্নবিশ^াস তৈরী হয়, আমিও পারবো। এভাবেই আমি আমার উদ্যোক্তা জীবন শুরু করি।
ছোটবেলা থেকেই রান্নাটা আমার শখ ছিল। তাই হোম মেইড ফুড নিয়ে উদ্যোগ শুরু করি। আমি মনে করি যে কাজটা সম্পর্কে আপনার অনেক অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান আছে সে কাজটা নিয়েই উদ্যোগ শুরু করা উচিত। ২০২০ সালের শেষের দিকে আমার মেয়ের সহযোগীতায় এই উদ্যোগের একটা ফেসবুক পেইজ খুলি। আমার পেইজের নাম ”মনের মতো খাবার”। আমার সিগনেচার ডিস গরুর মাংশের মিটলোফ। ঘরে তৈরী স্বাস্থ্যসম্মত খাবার সবাইকে পৌছে দেয়ার জন্যই আমার এই ছোট্ট প্রয়াস। উদ্যোগ সফল করার জন্য কি প্রয়োজন? উদ্যোক্তার কাজই হচ্ছে কাষ্টমারের সমস্যার সমাধান করা। উদ্যোক্তার সফলতার পথ দীর্ঘ হলেও অসম্ভব কিছু না। উদ্যোগের শুরুতেই সফলতা আসবে এটা মনে করা ভুল। অনেক সময় উদ্যোগ ব্যর্থও হতে পারে। তাই বলে ভেঙ্গে পড়লে চলবে না। গন্তব্য স্থির করে নিজের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে, এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে। থেমে গেলে চলবে না, লেগে থাকতে হবে। পরিকল্পনাহীন ভাবে এগিয়ে গেলে উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে। নিজের উদ্যোগ সম্পর্কে কাষ্টমারকে সঠিক ধারণা দিতে পারলে কাষ্টমার পন্যের প্রতি আগ্রহী হবে এবং তখন উদ্যোক্তার উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে যাওয়া সহজ হবে। নতুন উদ্যোক্তা তৈরীতে করনীয় নতুন উদ্যোক্তা হিসাবে নিজেকে তৈরী করতে কতকগুলো বিষয় মাথায় রাখতে হবে। নিজেকে গুরুত্ব দিতে হবে। কিছুতেই থেমে গেলে চলবে না, এগিয়ে যেতে হবে অন্যরা কি বলছে, এগুলো নিয়ে মাথা ঘামানোর কোন প্রয়োজন নেই দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে ইতিবাচক লোকজনের সাথে মিশতে হবে। সৃজনশীল চিন্ত-ভাবনা করতে হবে। মাঝে মাঝে কাজ থেকে নিজেকে ছুটি দিতে হবে। ব্যর্থতা জীবনের শেষ কথা নয় এটা বিশ^াস করতে হবে এবং এ থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে।
নতুন উদ্যোক্তাদের সুবিধা কি?
মানুষ বর্তমানে অনেক ইতিবাচক মনোভাবের, এটা একটা ভালো দিক। বর্তমান সরকার উদ্যোক্তা বান্ধব হওয়ায় সামনে আরো অনেক উদ্যোক্তা তৈরী হবে। উদ্যোক্তা তৈরীতে করোনাকালীন সময়ে একটা বিপ্লব ঘটে গেছে। ব্যাপক হারে উদ্যোক্তা তৈরী হয়েছে। কারণ আইসিটি প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে উদ্যোগের প্রচারে নেটওয়াকিং এখন অনেক ভালো। যারা নতুন উদ্যোগ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, উদ্যোগ শুরু করার আগে তারা যদি ওমেন এন্ড ই-কমার্স ট্রাস্ট (উই), আনন্দমেলা এসব প্লাটফরমে নিজেকে যুক্ত করতে পারেন, তাহলে আমি মনে করি তাদের বিভিন্ন ট্রেনিং, ওয়াকশপ এগুলো উদ্যোগ নিতে অনেক সহায়ক হবে। এছাড়া এসএমই মেলায় অংশগ্রহন করে, বিসিক-এর প্রশিক্ষণ নিয়ে, জয়িতা বা এনজিওর বিভিন্ন কর্মশালায় অংশগ্রহন করার সুযোগ রয়েছে। ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এর সহায়তায় ই-কমার্স বিষয়ক বিভিন্ন প্রশিক্ষনের আয়োজন করা হয়। এগুলোকে অংশগ্রহন করার মাধ্যমে নতুন উদ্যোক্তা উদ্যোগের জন্য সঠিক দিক নির্দেশনা পেয়ে যাবেন। উদ্যোক্তারা, যারা বিশেষ করে গৃহিনী, তাদের অনেক পারিবারিক চ্যলেঞ্জ মোকাবেলা করে উদ্যোগ চালাতে হয়। যেমন, কারো যৌথ পরিবার, কারো কারো বাসায় বয়স্ক রোগী থাকে, কারো কারো বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু। অনেক সময় এসব কারণে তাদের মানসিক চাপ বেড়ে যায়। আবার করোনাকালীণ সময়ে করোনার কারনেও অনেকে মানষিক চাপে পড়ছেন। বর্তমানে মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নের জন্য মনোচিকিৎসার প্লাটফরম বা প্রতিষ্ঠান তৈরী হয়েছে। এসব মানসিক স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রনের জন্য মেডিটেশন দেয়া হয়। যা নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য একটি সুবিধা বলে আমি মনে করি। নতুন উদ্যোক্তা তৈরীতে প্রতিবন্ধকতা উদ্যোক্তাদের ব্যপক সামাজিক স্বীকৃতি থাকা প্রয়োজন। একজন উদ্যোক্তার উদ্যোগের পথে সবচেয়ে বড় বাধা হলো সামাজিক স্বীকৃতি। এখনো সমাজে একজন উদ্যোক্তাকে ইতিবাচক হিসাবে গ্রহন করা হয় না। প্রয়োজনীয় ও সঠিক ধারণা ও তথ্য সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে নানা ধরণের প্রতিবন্ধকতা আছে। সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে একজন উদ্যোক্তা উদ্যোগ নেয়ার কিছুদিন পরেই ঝড়ে পড়েন। অনেক উদ্যোক্তাই যারা প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকেন, ডেলিভারী সিষ্টেমের দূর্বলতার কারনে তাদের উদ্যোগ থেকে ঝড়ে পড়েন। তবে আশার কথা হলো একশপ নামে একটি প্রতিষ্ঠান তৈরী হয়েছে। এখানে একশপ ডেলিভারী আছে যা প্রত্যন্ত অঞ্চলের উদ্যোক্তাদের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। দেশের জনগোষ্ঠীর অর্ধেকই নারী। সবাই যে পাশ করার পর বড় চাকুরী পাবে বা সবার কাছেই ব্যবসার অনেক পুজি আছে এমনটা নয়। সেক্ষেত্রে তারা যদি উদ্যোক্তা হন তাহলে অনেক ভালো কিছু করার সুযোগ রয়েছে। প্রতিযোগীতায় টিকে থাকার জন্য এবং উদ্যোগকে এগিয়ে নেয়ার জন্য প্রথমেই উদ্যোগের পিছনে ব্যয় না করে যিনি উদ্যোগটি চালাবেন তার পিছনে বিনিয়োগের প্রয়োজন রয়েছে। উদ্যোক্তা নিজে যত উন্নত হবেন, যত নতুন নতুন জ্ঞান ও দৃষ্টিভঙ্গি শেখার চেষ্টা করবেন ততই তিনি তার উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে যেতে পারবেন।