পিংকি পালের উদ্দ্যোগের গল্প-দিনটা ছিল চার জুলাই ২০২০ সাল। লকডাউনের মধ্যে আমার মেয়ের অন্নপ্রাশন (মুখে ভাত) অনুষ্ঠান। আর সেই অনুষ্ঠানে মেয়েকে সাজানোর জন্য মেয়ের মাথার চূড়া (মাথার মুকুট) দরকার। লকডাউনে সব দোকান বন্ধ। তারপর আমি ইউটিউবে ভিডিও দেখে চূড়া বানানো শিখি। বাসায় থাকা কাগজ, আঠা, পুতি ও পাথর দিয়ে তৈরি করে ফেললাম নিজের মেয়ের জন্য হাতে বানানো চূড়া। চূড়া দেখে সবাই খুব প্রশংসা করলো। সেটা দেখে আমি খুব খুশি হলাম। তারপর থেকে আমার মনে ইচ্ছা জাগলো আমি হ্যান্ড মেড আইটেম নিয়ে কাজ করে একজন উদ্যোক্তা হব। শুরু করি হ্যান্ডমেড জুয়েলারি ও হ্যান্ডিক্রাফট আইটেমের কাজ। ইউটিউব ছিল আমার কাজের শিক্ষক। ইউটিউব এর বিভিন্ন ভিডিও দেখে কাজ শিখতাম।তারপর মার্কেটে গিয়ে গহনা তৈরির উপকরণ কিনে এনে গহনা বানাতাম। একজন বিবাহিত মেয়ে হিসেবে সংসারের কাজ, বাচ্চাকে সামলে সময় বের করে কাজগুলো করতাম। পাড়া মহল্লার সবাই আমার কাছ থেকে হ্যান্ড মেড জুয়েলারি কিনলো এবং খুব প্রশংসা করল।আমি যেন আরো শক্তি ও সাহস পেলাম। স্বপ্ন দেখতে শুরু করি বড় কিছু করার। ফেসবুকে একটা পেজ খুললাম নাম অপরাজিতা। ফেসবুক পেইজে প্রথমত বিক্রি খুব ভাল ছিল না। অনেক গহনা তৈরি করতাম কিন্তু বেশি বিক্রি হতো না দেখে মনটা খারাপ হয়ে যেত। তারপরে পেইজে অনেক সময় দিতে শুরু করলাম। অনেক একটিভ থাকতাম পেইজে। আস্তে আস্তে বিক্রি বাড়লো। কাস্টমারদের সাথে ভালো ব্যবহার তাদের পছন্দমত কাস্টমাইজড গহনা তৈরি করে দেওয়া এবং তাদেরকে সেম প্রোডাক্ট ডেলিভারি দেওয়াতে খুব অল্প সময়ের মধ্যে অনেকের বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছি। যার কারণে অনলাইনে আমার অর্ডার অনেক বেড়ে গেল।আমার স্বামী (টুটুল পাল) আমাকে অনেক সাহায্য করত আমার কাজে। সংসার ও বাচ্চাকে সামনে সারাদিন খুব একটা কাজ করতে পারতাম না। রাতে খাওয়া দাওয়া করে বাচ্চাকে ঘুম পাড়িয়ে শুরু করতাম কাজ ।আমার স্বামী ও আমি রাত জেগে কাজ করতাম অনেক সময় কাজ করতে করতে ভোর হয়ে গেছে। শরীর খুবই ক্লান্ত লাগতো কিন্তু আমার স্বপ্ন আমাকে শক্তি জোগাতো । শশুর বাড়ি ও আমার বাড়ি আমাকে অনেক সাপোর্ট করে আমার কাজে। হঠাৎ আমার পেজটা কোন কারণে নষ্ট হয়ে যায়। অনেক কাস্টমার কে হারিয়ে ফেলি। মন ভেঙ্গে যায়। আমার স্বামী আমাকে সাহস দিয়ে আবার কাজ শুরু করতে বলে। তারপর মেয়ের নাম দিয়ে নতুন পেইজ ওপেন করি প্রত্যাশা গ্যালারী। আমার স্বপ্ন পূরণের কাজে সাহায্য করতে করতে আমার স্বামী ও পুরোপুরি এই কাজে জড়িয়ে পড়ে। স্বপ্নটা এখন দুজনের হয়ে যায়। মার্কেটে গিয়ে কাঁচামাল কেনা তারপর প্রোডাক্ট কমপ্লিট করা, ডেলিভারি প্যাকেট করা সবকিছু করতে করতে স্বামীর অফিস যেতে মাঝেমধ্যে লেট হতো। তার জন্য অফিসে অনেক ঝামেলার সম্মুখীন হতে হয় তাকে ।তবু স্বপ্ন যেন সব কিছুর ঊর্ধ্বে ।কোন কিছুতেই আমরা দুজন আটকে যায়নি ।নতুন পেইজে আস্তে আস্তে অর্ডার বাড়তে শুরু করে ।এর মধ্যে আমাদের কাছে অনেকেই পাইকারিতে গহনা কিনতে আসে।আমি একা সব সামলাতে পারছিলাম না ।তারপর আমার স্বামী চাকরি ছেড়ে আমাদের নিজ কাজে অন্তর্ভুক্ত হয়। এখন দুজনে মিলে কাজ করি। যেহেতু এখন এই কাজটাই আমাদের সবকিছু এটা দিয়ে সংসার চলবে তাই আমার স্বামী ও আমি মিলে কাজের পরিধি আরো বাড়িয়ে তুলি ।বিভিন্ন মেলাতে অংশগ্রহণ করি । মেলাতে আমাদের হাতের কাজের সুনাম ও চাহিদা দেখে খুব উৎসাহিত হই। সবার দোয়া ও আশীর্বাদ পেয়ে আজ এতদূর আসতে পেরেছি। আমার ইচ্ছা আছে কিছু কর্মী নিয়োগ দিব কাজ শিখাবো আমার মত সবাই যেন নিজে কিছু করতে পারে। স্বত্তাধিকারী-প্রত্যাশা গ্যালারি।