নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার বিষ্ণুপুর (জন্তিপুর) গ্রামে স্বামীর পরক্রিয়া প্রেমে বাধা দেওয়ায় স্ত্রী মুরশিদা বেগম (২৫) কে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় গৃহবধূ মুরশিদা বেগম এর শ্বশুর ছয়েফ উদ্দিন ও তার শ্বাশুড়ী শাহারা খাতুনকে আটক পূর্বক বৃহস্পতিবার বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে নওগাঁ জেল হাজতে প্রেরণ করেছেন মহাদেবপুর থানা পুলিশ। অপরদিকে নিহতের স্বামী শাহিদুল ইসলাম সহ অপর অভিযুক্তরা পলাতক রয়েছেন। থানা পুলিশ মুরশিদা বেগমের মৃতদেহ উদ্ধার পূর্বক নওগাঁ সদর হাসপাতাল মর্গে ময়না তদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার বিকেলে তার বাবার বাড়ির স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছেন।
নিহত গৃহবধূ মুরশিদা বেগম এর বাবা মহাদেবপুর উপজেলার চকরাজা গ্রামের মোশারফ হোসেন ও বড় ভাই মোরশেদুল ইসলাম জানান, মুরশিদা বেগম কে দুই বছর আগে মহাদেবপুর উপজেলার জন্তিগ্রাম গ্রামের ছয়েফ উদ্দিনের ছেলে শাহিদুল ইসলাম ছোটন এর সাথে বিয়ে দেয়া হয়। তাদের দাম্পত্য জীবনে ৮ মাস বয়সী শোভনা আক্তার নামে একটি মেয়ে সন্তান আছে।
এরমধ্যে শাহিদুল ইসলাম তার ভাবী মোছাঃ শারমিন বেগম (৩২) এর সাথে পরক্রিয়া প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পরেন। সেই সম্পর্কের বিষয়টি জেনে যাওযার পর প্রতিবাদ করার কারনে আমার মেয়ের সাথে জামাই শাহিদুল ইসলাম ছোটন খারাপ ব্যবহার শুরু করেন এবং মাঝে মাঝেই মারপিট করত। আমার মেয়ে বিষয়টি আমাদেরকে জানালে আমরা ধর্য্য সহকারে তাকে সংসার করার কথা বলি। তারপরও আমার মেয়েকে কারনে- অকারনে খারাপ ব্যবহার সহ শারিরীক ও মানসিক ভাবে নির্যাতন মারপিট করেই আসছিলো।
এরমাঝে গতকাল বুধবার বিকেল অনুমান ৪ টারদিকে ভীমপুর ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ মোঃ ইয়াকুব আলীর মোবাইল ফোনে আমাদের কে জানানো হয়, আমার মেয়ে মুরশিদা বেগম খুন হয়েছে। এই সংবাদ পেয়ে আমি আমার ছেলে ও আত্নীয়-স্বজনরা জন্তিগ্রামে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি বাড়ির বারান্দায় কাপড় দিয়ে ঢাকা অবস্থায় আমার মেয়ের মৃতদেহ পড়ে আছে এবং মেয়ের গলার ডান পার্শ্বে থুতনির নিচে কালশিরা দাগ দেখতে পাই। ইতি মধ্যেই খবর পেয়ে মহাদেবপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে প্রাথমিক সুরত হাল রিপোর্ট অন্তে বুধবার দিনগত রাতেই মৃতদেহ পুলিশি হেফাজতে নেয় এবং ঘটনাস্থল থেকে নিহতের শ্বশুড় ও শাশুড়িকে আটক পূর্বক থানা হেফাজতে নেয় পুলিশ।
নিহতের পিতা আরো জানান, আমি নিজেই বাদী হয়ে বুধবার রাতেই মহাদেবপুর থানায় এজাহার দিয়েছি। থানা পুলিশ বৃহস্পতিবার ময়না তদন্ত শেষে মৃতদেহ আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছেন।
নিহতের বড় ভাই সহ স্বজনরা জানান, পরক্রিয়া প্রেমের জেরধরে বুধবার দিনে দুপুর থেকে বিকেল ৪ টার পূর্বে যে কোন এক সময় মুরশিদাকে গলাটিপে শ্বাস রোধ করে হত্যার পর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে গলায় ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচারণা চালিয়ে বার্থ হয়ে স্বামী শাহিদুল ইসলাম ছোটন ও তার ভাবী সহ অভিযুক্তরা পালিয়ে যায়।
গৃহবধূর মৃতদেহ উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করে মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোজাফফর হোসেন জানান, গৃহবধূ মৃত্যুর খবর পেয়ে বুধবার থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌছে প্রাথমিক সুরত হাল রিপোর্ট অন্তে মৃতদেহ উদ্ধার সহ ঘটনাস্থল থেকে নিহতের শ্বশুর ও শাশুড়ীকে থানা হেফাজতে নেওয়া হয়। এঘটনায় নিহতের বাবা মোশারফ হোসেন বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন বলেও জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মহাদেবপুর থানা পুলিশ আটককৃত শ্বশুর ও শ্বাশুড়িকে বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে নওগাঁ জেল হাজতে প্রেরণ করেছে বলে নিশ্চিত করে মহাদেবপুর থানার ওসি (তদস্ত) আবুল কালাম আজাদ জানান, ঘটনার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছার পূর্বেই নিহতের স্বামী শাহিদুল ইসলাম ঝোটন সহ অপর অভিযুক্তরা পলাতক থাকায় তাদেরকে আটক করা যায়নি। তাদেরকেও আটকের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান ওসি (তদন্ত)।
অপরদিকে নিহত মুরশিদার মৃতদেহ পিতার বাড়ি চকরাজা গ্রামে পৌছার পর পরিবার, স্বজন সহ গ্রামবাসীর মাঝে শোকের ছাঁয়া নেমে এসেছে।